Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পশুর খাদ্য তালিকায় কাঁচাঘাস

পশুর খাদ্য তালিকায় কাঁচাঘাস
ডা: সুচয়ন চৌধুরী
পশু খাদ্যের অন্যতম উপাদান হলো ঘাস। মাঠের সবুজ ঘাস পশুর খুব পছন্দের খাবার। পশুর বেঁচের থাকার জন্য এবং বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান লুকিয়ে রয়েছে এই ঘাসের মধ্যে। তাছাড়া বর্তমান বাজারে দানাদার খাদ্যের চেয়ে কাঁচা ঘাসের দাম অনেক অনেক কম। তাই পশু খাদ্যের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে তরতাজা কাঁচা ঘাস।
আমাদের দেশের যে ঘাসগুলো পাওয়া যায় তাদের মধ্যে কিছু হলো স্থায়ী ঘাস আবার কিছু হলো অস্থায়ী বা মৌসুমি ঘাস। স্থায়ী ঘাসগুলো একবার লাগালে কয়েক বছর বেঁচে থাকে এবং বছর বছর ঘাস সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু মৌসুমি ঘাসগুলো এক মৌসুম বেঁচে থাকে এবং একবার কেটে খাওয়ালেই শেষ। স্থায়ী ঘাসের মধ্যে রয়েছে নেপিয়ার, জার্মান পারা, ডেসমোডিয়ার ইত্যাদি। আবার অস্থায়ী ঘাসের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, সরগম মাসকলাই ইত্যাদি। এই সমস্ত ঘাসের মধ্যে কিছু আবার নডিউল যুক্ত। যেমন- খোসারি, শিম ইত্যাদি।
বর্তমানে বিভিন্ন উন্নত জাতের ঘাস চাষের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অনেক কৃষকদের মধ্যে। যা কিনে নিয়ে নিজের খামারে গরুকে খাওয়াচ্ছে খামারি। খামার লাভবান করতে হলে দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বেশি বেশি কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। যা পশুর দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়।
ঘাসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে তার ড্রাইমেটার বা শুষ্ক অংশ কতটুকু। কাঁচা ঘাসের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে থাকে পানি। এই পানি বা জলীয় অংশ বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তা হলো ড্রাইমেটার বা শুষ্ক অংশ। মূলত খাদ্যের পাঁচটি উপাদান শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল এবং আঁশ জাতীয় বিভিন্ন উপাদান থাকে এই অংশে।
ঘাসের জলীয় অংশের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় যে শর্করা বা কার্বহাইড্রেড থাকে তা সহজে ঘাস থেকে রুমেনে চলে আসে। এই শর্করা রুমেনের মাইক্রোফ্লোরাগুলোকে দ্রুত শক্তিশালী করে তুলে। ফলে রুমেনে যে ঘাসজাতীয় খাদ্য থাকে তার হজমপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এই শর্করাই সাইলেজের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ফলে এর পুষ্টিমান বৃদ্ধি পায়।
ঘাস থেকে পাওয়া প্রোটিন অনেক সহজলভ্য। পশু খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দামী উপাদান হলো আমিষ বা প্রোটিন। আমদানি করা প্রোটিনের চেয়ে ঘাস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন অনেক সস্তা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ঘাসে যে প্রোটিন পাওয়া যায় তা মূলত ক্রড প্রোটিন যেখানে নাইট্রোজেনের পরিমাণ প্রায় ৬.২৫ গুণ বেশি। এই ক্রুড প্রোটিনের ৮০% হল ‘ট্রু প্রোটিন,’ অবশিষ্ট অংশটুকু হলো নন-প্রোটিন-নাট্রোজেন। দুই ধরনের প্রোটিনই পশুর শরীরে ব্যবহৃত হয়। তবে ট্রু প্রোটনটি পশুর শরীরে মাংস এবং দুধ বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করে। আর নন-প্রোটিন-নাইট্রোজেনের বেশির ভাগ অংশ পশুর শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
ক্রুড প্রোটিন রুমেনে দুইভাবে বিভক্ত হয়, যার একটি অংশ রুমেনের অণুজীব  দ্বারা ভেঙ্গে মাইক্রোবিয়াল প্রোটিনে পরিণত হয়। যা পরবর্তীতে মাইক্রোবসের সাথে সাথে হজম হয়ে যায়। আর বাকি অংশ রুমেনে হজম না হয়ে ক্ষুদ্রান্তে চলে আসে এবং সেখানে হজম হয়।
ঘাসে ক্রুড প্রোটিনের পরিমাণ নির্ভর করে ঘাসের জাতের উপর। আবার ঘাস চাষের পদ্ধতির উপরও এর পরিমাণ নির্ভর করে। যেমন ঘাস চাষের সময় কতটুকু নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা হয়েছে আবার ঘাসটি কোন বয়সে কাটা হলো তার উপর ঘাসের ক্রুড প্রোটিনের পরিমাণ নির্ভর করে। নাট্রোজেন সার প্রয়োগের পর ট্রু প্রোটিন সমৃদ্ধ ক্রুড প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে ঘাসগুলো যখন বাড়তে থাকে তখন নন প্রোটিন নাইট্রোজেনগুলো ট্রু প্রোটিনে রূপান্তরিত হতে থাকে ফলে ঘাসে ট্রু প্রোটিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
সাইলেজে ট্রু প্রোটিনের পরিমাণ ফার্মেন্টেশনের উপর নির্ভর করে। সাইলেজের ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন যত ভালো হবে তত ট্রু প্রোটিনের পরিমাণ বেশি হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পশু যে পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করে তার ২০% মাত্র শরীরে কাজে লাগে বাকিগুলো বর্জ্য হিসেবে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। মূলত ট্রু প্রোটিনটি পশুর কাজে লাগে।
পশুর খাদ্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো আঁশ বা ফাইবার। রুমেনে খাদ্য নড়াচড়া করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফাইবার। এটাই রুমেন উদ্দীপনা তৈরি করে। ফলে রুমেন নড়াচড়া করে এবং খাদ্য পরিপাক ত্বরান্বিত হয়। কিছু ফাইবার রুমেনে হজম হয়, তবে ধীরে। এটিও রুমেনে এবং ক্ষুদ্রান্তে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
ঘাসে ফাইবারের পরিমাণ কি রকম হবে তা নির্ভর করে ঘাসটি কখন সংগ্রহ করা হলো তার উপর। ঘাস যখন কচি থাকে তখন ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। ঘাস পরিপক্ব হয় তখন ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পরিপক্ব ঘাস কম হজম হয়।
পশু খাদ্যে আঁশজাতীয় খাদ্য পর্যাপ্ত থাকলে রুমেনে খাদ্যের পরিপাক সঠিক সময়ে শেষ হয় তাই পশুর নিজে থেকে খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়। এই জন্য খাদ্যে ড্রাই মেটারের ৩০-৪০% আঁশ থাকা প্রয়োজন। এক কথায় বলতে গেলে ফাইবের ৬০-৭০% রুমেনে পরিপাক যোগ্য হতে হবে। যখন ঘাসে আঁশের পরিমাণ এই লেভেলের নিচে নেমে যায় তখন খাবারে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ফাইবার যুক্ত করতে হবে। যাতে খাবার খুব দ্রুত রুমেন থেকে বের হয়ে যেতে না পারে।
যখন সাইলেজ বানানো হয় তখন খেয়াল রাখতে হবে যাতে ঘাস প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে না যায়।
এবার আসি পশু খাদ্যের অন্য একটি উপাদানের আলোচনায় যা ঘাসে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান এবং গাভীর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সেটি হলো “লিপিড”। ঘাসে যে লিপিড পাওয়া যায় তার বেশির ভাগ হলো পলিআনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (পি ইউ এফ এ)। এগুলো ভালো ফ্যাটি এসিড নামে পরিচিত। যাদেরকে আমরা ওমেঘা-৩ এবং ওমেঘা-৯ ফ্যাটি এসিড নামে চিনে থাকি। মানুষের শরীরে এবং পশুর শরীরে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
পশুর শরীরে ‘পিইউএফএ’ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে পশুর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই ফ্যাটি এসিডের প্রভাবে পশুর মাংস দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকে এবং মাংসের রং দীর্ঘক্ষণ সুন্দর রাখে। ঘাসের শুষ্ক অংশে যে পরিমাণ ফ্যাটি এসিড থাকে তার পরিমাণ পশুর শরীরে ২.৫ থেকে ৫% হতে পারে যার ৬৫-৭০% হলো ‘পিইউএফএ’।
লিপিডে শর্করার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি পাওয়া যায় এবং এটি পশুর শক্তির একটি বড় উৎস। তাই পশু খাদ্যে অধিক শক্তি উৎপাদনের জন্য লিপিড জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। শুকনো খাবারের চেয়ে ফ্রেশ কাঁচা ঘাসে পিইউএফ এ এর পরিমাণ বেশি।
পশুর সুস্বাস্থ্য এবং সঠিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এবং মিনারেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশুকে নিয়মিত ঘাস খাওয়ালে বাড়তি ভিটামিন মিনারেল খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। সাইলেজে ভিটামিন এবং মিনারেলের পরিমাণ তেমন পরিবর্তন হয় না। তবে শস্য কর্তনের সময় বেশি আর্দ্র থাকলে গুণগত মান হ্রাস পায়। যদিও রুমেনের অণুজীবগুলো অনেক ভিটামিন সিনথেসিস করে কিন্তু কিছু ফ্যাট সল্যুবল ভিটামিন পশুকে গ্রহণ করতে হয় সরবরাহকৃত খাদ্য থেকে।
সবুজ ঘাস ক্যারটিনের একটি ভালো উৎস। যা ভিটামিন এ এর প্রিকার্সর হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টি ভালো রাখা, মিউকাস ম্যামব্রেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দুধ দানের সময় প্রায় ২০০০ আইইউ ভিটামিন এ দুধের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
আবার লিগুমিনাস যুক্ত ঘাসের ৮-১২ % ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট (ডিসিপি) এবং ৪৫-৬০% টোটাল ডাইজেস্টিভ নিউটিয়েন্ট , যা পশুর শরীর বৃত্তীয় কাজের জন্য খুব প্রয়োজন।
এত এত গুণ থাকার পর এক কথায় বলা যায় পশু খাদ্য হিসেবে কাঁচা ঘাসের কোন বিকল্প নেই। উৎপাদন খরচ কমিয়ে, পশুর শরীরের যথাযথ পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করতে পশু খাদ্যের দৈনিক তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচাঘাস যুক্ত করা খুবই জরুরি।

লেখক : উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি। মোবাইল : ০১৭১৮৬৩০২৬৮, ই-মেইল :ulo:manikchari.dls@gmail.com

পশুর খাদ্য তালিকায় কাঁচাঘাস

পশুর খাদ্য তালিকায় কাঁচাঘাস
ডা: সুচয়ন চৌধুরী
পশু খাদ্যের অন্যতম উপাদান হলো ঘাস। মাঠের সবুজ ঘাস পশুর খুব পছন্দের খাবার। পশুর বেঁচের থাকার জন্য এবং বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান লুকিয়ে রয়েছে এই ঘাসের মধ্যে। তাছাড়া বর্তমান বাজারে দানাদার খাদ্যের চেয়ে কাঁচা ঘাসের দাম অনেক অনেক কম। তাই পশু খাদ্যের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে তরতাজা কাঁচা ঘাস।
আমাদের দেশের যে ঘাসগুলো পাওয়া যায় তাদের মধ্যে কিছু হলো স্থায়ী ঘাস আবার কিছু হলো অস্থায়ী বা মৌসুমি ঘাস। স্থায়ী ঘাসগুলো একবার লাগালে কয়েক বছর বেঁচে থাকে এবং বছর বছর ঘাস সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু মৌসুমি ঘাসগুলো এক মৌসুম বেঁচে থাকে এবং একবার কেটে খাওয়ালেই শেষ। স্থায়ী ঘাসের মধ্যে রয়েছে নেপিয়ার, জার্মান পারা, ডেসমোডিয়ার ইত্যাদি। আবার অস্থায়ী ঘাসের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, সরগম মাসকলাই ইত্যাদি। এই সমস্ত ঘাসের মধ্যে কিছু আবার নডিউল যুক্ত। যেমন- খোসারি, শিম ইত্যাদি।
বর্তমানে বিভিন্ন উন্নত জাতের ঘাস চাষের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অনেক কৃষকদের মধ্যে। যা কিনে নিয়ে নিজের খামারে গরুকে খাওয়াচ্ছে খামারি। খামার লাভবান করতে হলে দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বেশি বেশি কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। যা পশুর দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়।
ঘাসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে তার ড্রাইমেটার বা শুষ্ক অংশ কতটুকু। কাঁচা ঘাসের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে থাকে পানি। এই পানি বা জলীয় অংশ বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তা হলো ড্রাইমেটার বা শুষ্ক অংশ। মূলত খাদ্যের পাঁচটি উপাদান শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল এবং আঁশ জাতীয় বিভিন্ন উপাদান থাকে এই অংশে।
ঘাসের জলীয় অংশের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় যে শর্করা বা কার্বহাইড্রেড থাকে তা সহজে ঘাস থেকে রুমেনে চলে আসে। এই শর্করা রুমেনের মাইক্রোফ্লোরাগুলোকে দ্রুত শক্তিশালী করে তুলে। ফলে রুমেনে যে ঘাসজাতীয় খাদ্য থাকে তার হজমপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এই শর্করাই সাইলেজের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ফলে এর পুষ্টিমান বৃদ্ধি পায়।
ঘাস থেকে পাওয়া প্রোটিন অনেক সহজলভ্য। পশু খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দামী উপাদান হলো আমিষ বা প্রোটিন। আমদানি করা প্রোটিনের চেয়ে ঘাস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন অনেক সস্তা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ঘাসে যে প্রোটিন পাওয়া যায় তা মূলত ক্রড প্রোটিন যেখানে নাইট্রোজেনের পরিমাণ প্রায় ৬.২৫ গুণ বেশি। এই ক্রুড প্রোটিনের ৮০% হল ‘ট্রু প্রোটিন,’ অবশিষ্ট অংশটুকু হলো নন-প্রোটিন-নাট্রোজেন। দুই ধরনের প্রোটিনই পশুর শরীরে ব্যবহৃত হয়। তবে ট্রু প্রোটনটি পশুর শরীরে মাংস এবং দুধ বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করে। আর নন-প্রোটিন-নাইট্রোজেনের বেশির ভাগ অংশ পশুর শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
ক্রুড প্রোটিন রুমেনে দুইভাবে বিভক্ত হয়, যার একটি অংশ রুমেনের অণুজীব  দ্বারা ভেঙ্গে মাইক্রোবিয়াল প্রোটিনে পরিণত হয়। যা পরবর্তীতে মাইক্রোবসের সাথে সাথে হজম হয়ে যায়। আর বাকি অংশ রুমেনে হজম না হয়ে ক্ষুদ্রান্তে চলে আসে এবং সেখানে হজম হয়।
ঘাসে ক্রুড প্রোটিনের পরিমাণ নির্ভর করে ঘাসের জাতের উপর। আবার ঘাস চাষের পদ্ধতির উপরও এর পরিমাণ নির্ভর করে। যেমন ঘাস চাষের সময় কতটুকু নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা হয়েছে আবার ঘাসটি কোন বয়সে কাটা হলো তার উপর ঘাসের ক্রুড প্রোটিনের পরিমাণ নির্ভর করে। নাট্রোজেন সার প্রয়োগের পর ট্রু প্রোটিন সমৃদ্ধ ক্রুড প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে ঘাসগুলো যখন বাড়তে থাকে তখন নন প্রোটিন নাইট্রোজেনগুলো ট্রু প্রোটিনে রূপান্তরিত হতে থাকে ফলে ঘাসে ট্রু প্রোটিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
সাইলেজে ট্রু প্রোটিনের পরিমাণ ফার্মেন্টেশনের উপর নির্ভর করে। সাইলেজের ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন যত ভালো হবে তত ট্রু প্রোটিনের পরিমাণ বেশি হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পশু যে পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করে তার ২০% মাত্র শরীরে কাজে লাগে বাকিগুলো বর্জ্য হিসেবে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। মূলত ট্রু প্রোটিনটি পশুর কাজে লাগে।
পশুর খাদ্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো আঁশ বা ফাইবার। রুমেনে খাদ্য নড়াচড়া করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফাইবার। এটাই রুমেন উদ্দীপনা তৈরি করে। ফলে রুমেন নড়াচড়া করে এবং খাদ্য পরিপাক ত্বরান্বিত হয়। কিছু ফাইবার রুমেনে হজম হয়, তবে ধীরে। এটিও রুমেনে এবং ক্ষুদ্রান্তে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
ঘাসে ফাইবারের পরিমাণ কি রকম হবে তা নির্ভর করে ঘাসটি কখন সংগ্রহ করা হলো তার উপর। ঘাস যখন কচি থাকে তখন ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। ঘাস পরিপক্ব হয় তখন ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পরিপক্ব ঘাস কম হজম হয়।
পশু খাদ্যে আঁশজাতীয় খাদ্য পর্যাপ্ত থাকলে রুমেনে খাদ্যের পরিপাক সঠিক সময়ে শেষ হয় তাই পশুর নিজে থেকে খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়। এই জন্য খাদ্যে ড্রাই মেটারের ৩০-৪০% আঁশ থাকা প্রয়োজন। এক কথায় বলতে গেলে ফাইবের ৬০-৭০% রুমেনে পরিপাক যোগ্য হতে হবে। যখন ঘাসে আঁশের পরিমাণ এই লেভেলের নিচে নেমে যায় তখন খাবারে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ফাইবার যুক্ত করতে হবে। যাতে খাবার খুব দ্রুত রুমেন থেকে বের হয়ে যেতে না পারে।
যখন সাইলেজ বানানো হয় তখন খেয়াল রাখতে হবে যাতে ঘাস প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে না যায়।
এবার আসি পশু খাদ্যের অন্য একটি উপাদানের আলোচনায় যা ঘাসে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান এবং গাভীর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সেটি হলো “লিপিড”। ঘাসে যে লিপিড পাওয়া যায় তার বেশির ভাগ হলো পলিআনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (পি ইউ এফ এ)। এগুলো ভালো ফ্যাটি এসিড নামে পরিচিত। যাদেরকে আমরা ওমেঘা-৩ এবং ওমেঘা-৯ ফ্যাটি এসিড নামে চিনে থাকি। মানুষের শরীরে এবং পশুর শরীরে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
পশুর শরীরে ‘পিইউএফএ’ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে পশুর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই ফ্যাটি এসিডের প্রভাবে পশুর মাংস দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকে এবং মাংসের রং দীর্ঘক্ষণ সুন্দর রাখে। ঘাসের শুষ্ক অংশে যে পরিমাণ ফ্যাটি এসিড থাকে তার পরিমাণ পশুর শরীরে ২.৫ থেকে ৫% হতে পারে যার ৬৫-৭০% হলো ‘পিইউএফএ’।
লিপিডে শর্করার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি পাওয়া যায় এবং এটি পশুর শক্তির একটি বড় উৎস। তাই পশু খাদ্যে অধিক শক্তি উৎপাদনের জন্য লিপিড জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। শুকনো খাবারের চেয়ে ফ্রেশ কাঁচা ঘাসে পিইউএফ এ এর পরিমাণ বেশি।
পশুর সুস্বাস্থ্য এবং সঠিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এবং মিনারেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশুকে নিয়মিত ঘাস খাওয়ালে বাড়তি ভিটামিন মিনারেল খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। সাইলেজে ভিটামিন এবং মিনারেলের পরিমাণ তেমন পরিবর্তন হয় না। তবে শস্য কর্তনের সময় বেশি আর্দ্র থাকলে গুণগত মান হ্রাস পায়। যদিও রুমেনের অণুজীবগুলো অনেক ভিটামিন সিনথেসিস করে কিন্তু কিছু ফ্যাট সল্যুবল ভিটামিন পশুকে গ্রহণ করতে হয় সরবরাহকৃত খাদ্য থেকে।
সবুজ ঘাস ক্যারটিনের একটি ভালো উৎস। যা ভিটামিন এ এর প্রিকার্সর হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টি ভালো রাখা, মিউকাস ম্যামব্রেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দুধ দানের সময় প্রায় ২০০০ আইইউ ভিটামিন এ দুধের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
আবার লিগুমিনাস যুক্ত ঘাসের ৮-১২ % ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট (ডিসিপি) এবং ৪৫-৬০% টোটাল ডাইজেস্টিভ নিউটিয়েন্ট , যা পশুর শরীর বৃত্তীয় কাজের জন্য খুব প্রয়োজন।
এত এত গুণ থাকার পর এক কথায় বলা যায় পশু খাদ্য হিসেবে কাঁচা ঘাসের কোন বিকল্প নেই। উৎপাদন খরচ কমিয়ে, পশুর শরীরের যথাযথ পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করতে পশু খাদ্যের দৈনিক তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচাঘাস যুক্ত করা খুবই জরুরি।

লেখক : উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি। মোবাইল : ০১৭১৮৬৩০২৬৮, ই-মেইল :ulo:manikchari.dls@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon